Skip to content Skip to footer

মাসিক জিকরুল্লাহ

যেথা রহমতের ঢল বহে অবিরল…

মানুষের জীবনধারা গতিশীল তাই প্রতিনিয়ত এতে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। মানুষ বেড়েছে, মানুষের সমস্যা বেড়েছে, পৃথিবীর পরিবেশ, প্রেক্ষিত ও প্রকৃতি বদলে গেছে, বদলে গেছে মানুষের সমস্যার ধরন-ধারণ। এ সকল পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিধান দেয়ার জন্য যুগে যুগে পাঠিয়েছেন পথ প্রদর্শক অসংখ্য নবী-রাসূল (আ.)। এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নবী-রাসূলগণ তাঁদের দাওয়াত পেশ করেছেন। সমস্যার প্রকৃতি এবং তার সমাধানের পদ্ধতি যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এক আল্লাহে বিশ্বাস স্থাপনের এ মূলনীতি সবসময়ই ছিল এক এবং অভিন্ন। পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আপনি কি শুধু দুঃখ-কষ্টই পুষে যাচ্ছেন? মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী যত দুঃখ, বেদনা এবং কষ্টের প্রকৃত সূত্রপাত নিজের ভেতরেই, সেইসাথে এর প্রতিকার আপনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তা জানেন কি? যদি জানতে চান তবে আমি আপনাকে জানতে সাহায্য করবো। প্রয়োজন শুধু সঠিক নিরিখে এক অপ্রতিরোধ্য নিয়ম জানা এবং প্রয়োগ করা যা জীবনের জঞ্জালকণা সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

বস্তুবাদী মনোবিজ্ঞানীরাও এখন জিকিরের (জপের) মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব স্বীকার করেন। কেউ যদি বারবার বলতে থাকে, ‘আমি ভালো হচ্ছি’ তাহলে সে ভালো হয়ে উঠে। মনোবিজ্ঞানী Emile Coue দেখিয়েছেন- “Every day, in every way, I’m getting better and better”- এই অটোসাজেশন পুনরাবৃত্তিতে better মানুষ গড়ে উঠে। আধ্যাত্মিক সাধকগণ অন্তত ৫হাজার বছর আগে বলে গেছেন- জীবনে যার আবির্ভাব চাও, তার নাম জপ কর। যার আবির্ভাব চাও না- তার নাম মুখেও এনো না। ভালো কিংবা মন্দ কাজের প্রেরণা আসে জিকির থেকে। শব্দের মধ্যে যে শক্তি সুপ্ত থাকে, উচ্চারিত হলে তা প্রকট হওয়ার পথ খুঁজে পায়।

শব্দই শক্তি। যার নাম যত বেশি উচ্চারিত হয়, সে ততবেশি শক্তিশালী হয়। জিকিরের শক্তি প্রায় সকলেই অনুভব করতে পারে। হদয়ে জিকির না থাকা একটি মহা রোগ। কঠিন রোগীর জীবন যেমন ধীরে ধীরে অর্থহীন হয়ে পড়ে, তেমনই জিকিরহীন ব্যক্তির জীবনও অর্থহীন হয়ে পড়ে।

সব ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে আল্লাহর জিকির। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের সর্বাবস্থায় অধিক হারে তাঁর জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২) সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে হবে দাঁড়িয়ে, বসে, এমনকি শুয়ে যেভাবে পারা যায়, আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে।  আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টি বিষয়ে (তারা বলে) হে আমাদের রব! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

জীবন চলার পথে নানা রকম দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি আসে। সহ্য করতে হয় অসম্ভম যাতনা। এটাই দুনিয়ার অমোঘ সত্য বিধান। আর এর প্রভাব প্রাত্যহিক জীবনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা, অসহায়ত্ববোধের কারণে মূল্যহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েই চলছে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরগুলো শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)

আল্লাহর জিকির কিভাবে মানুষের অন্তরের প্রশান্তি দান করে এবং সর্বোপরি আপনার অস্তিত্বকে পরম করুণাময় স্রষ্টার নির্দেশিত রেখায় মিলিত করার সহজ রূপরেখা কীভাবে পাবেন এসব বিষয় নিয়েই মাসিক জিকরুল্লাহ প্রোগ্রাম।

এই জিকরুল্লাহ প্রোগ্রামকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে একটু একটু করে নিজের ভেতরের জগৎটাকে আবিষ্কার করা হবে। জিকিরের গভীরে ডুব দেওয়া, জিকির মুরাকাবা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে জিকিরের সম্পর্ক, এবং প্রাথমিক সবকিছুই শেখানো হবে। জিকির-মুরাকাবা করার মধ্যে দিয়ে আত্মভ্রমণের অনুভূতি আপনাকে অন্য এক অপার্থিব জগতে নিয়ে যাবে। যেখানে নিজ আত্মার সঙ্গে সৃষ্টি জগতের একাত্ম হওয়ার সূত্রটি আবিষ্কৃত হয়ে যাবে খুব সহজেই। সুফি মেডিটেশন ও জিকির নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি এক উজ্জ্বল, উষ্ণ, প্রশান্তিময় ও কর্মমুখর জীবনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। অর্জন করবেন মানসিক প্রশান্তি, আধ্যাত্মিকতা ও সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা।

জিকিরের অনন্য বৈশিষ্ট্য

জিকির এমন একটি ইবাদত যার কোনো সময়, সীমা, পরিমাণ ও  শর্ত নেই। দিনে-রাতে, সকাল-সন্ধ্যায়, হাঁটতে-বসতে এমনকি শয়ন অবস্থায় এবং অজু অবস্থায় হোক কিংবা অজুবিহীন হোক সর্বাবস্থায় জিকির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এ ইবাদতের জন্য কোনো বিশেষ পরিশ্রমও করতে হয় না। এবং কোনো অবসরের দরকার পড়ে না। জিকিরের মাধ্যমে পার্থিব কার্যক্রমও ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়। অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর স্মরণ রাখা—কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ সম্পর্কে অমনোযোগী ও গাফিল না হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা যখন নামাজ সম্পন্ন করো, তখন দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহ জিকির করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)

জিকিরকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত জীবিতদের মতো

আল্লাহর জিকিরকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত জীবিত ব্যক্তিদের মতো। যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের কলব মরে যায় যদিও তারা জীবিত থাকে। জিকিরের মাধ্যমে মানুষের মরা কলব জিন্দা হয়। যেমন—আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমানদার তারা এমন লোক যে যখন আল্লাহর জিকির করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় রবের ওপর ভরসা করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)

জিকির থেকে গাফিল ব্যক্তি মৃততুল্য

কখনো জিকির থেকে গাফিল হওয়া যাবে না। জিকির থেকে গাফিল হলে সৃষ্টির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা বিপদাপদ নাজিল হয়ে থাকে। যারা জিকির থেকে গাফিল হয় তাদের দৃষ্টান্ত হলো—যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে এবং যে আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতদের মতো। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭, মুসলিম, হাদিস : ৭৭৯)

মানুষের দুশ্চিন্তার অন্যতম একটি কারণ ভবিষ্যৎ-ভাবনা। আগামীকাল আমি কী খাব, কী পরিধান করব। এই বিষয়গুলো তার মাথায় গিজগিজ করতে থাকে, তাই তাঁর সব কিছু ঠিক থাকার পরও কেমন যেন এক অশান্তির রাজ্যে বাস করে। এর থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে আল্লাহর জিকির ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহ তাআলা আমার জন্য ভবিষ্যতে ভালোই রেখেছেন। কেননা যখন আপনি আল্লাহর জিকির করবেন তখন আপনি ভাববেন, আপনি আপনার জীবনে একা নন, আপনার সঙ্গে পরাক্রমশালী প্রভু আছেন; যিনি অদৃশ্য থেকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, আমার রব যার প্রতি ইচ্ছা তার রিজিক বাড়িয়ে দেন অথবা সীমিত করেন; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না। (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৬) দুশ্চিন্তার আরেকটি কারণ অতীত-ভাবনা। যা অতীতে চলে গেছে, তা ভেবে মানুষ দুশ্চিন্তায় কুঁড়ে কুঁড়ে মরতে থাকে। অতীতের বিভিন্ন অপরাধের কথা স্মরণ হলে নিজেকে লজ্জিত মনে হয়। কিন্তু আল্লাহর জিকির এই দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দেবে।  আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)

জীবনকে সহজ করতে হলে জীবন থেকে কিছু ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। ঠিক যেমন বহুদিন পর বাসায় ফিরলে ফার্নিচারের ওপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে, তেমনি দীর্ঘকাল ভোগবাদী জীবনযাপনের ফলে আমাদের জীবনেও ধুলোর আস্তরণ পড়ে। নতুনভাবে শুরু করতে হলে এই ধুলো সাফ করতে হবে। পরিবর্তন চাইলে সবার আগে আমাদের ভেতরটা পরিবর্তন করতে হবে। মাইন্ডসেটে পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব-এই কথাটা যেমন সত্য, মানুষ আবেগ দিয়ে পরিচালিত হয়-সেটাও তেমন সত্য। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ এবং দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া-পাওয়া আমাদের জীবনে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে মানসিক অস্থিরতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমালঙ্ঘনমূলক।’ সূরা কাহাফ : ২৮

দীর্ঘ ক্লান্তিকর দিনের শেষে আমরা একটা লম্বা ঘুম দিই। তারপর সকালে জেগে উঠি। এমনই এক সকালে কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছি-আমরা মূলত কী চাই? সেই চাওয়ার পথে কী কী বাধা পেরোতে হবে? কীভাবে আমরা প্রতিযোগিতা ছেড়ে সবাইকে ভালোবেসে নিজের জীবনটা কাটাতে পারি? এই প্রশ্নগুলোই আপনার নতুন জীবন শুরুর প্রথম ধাপ।

মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমরা যেহেতু মানুষ, ভুল আমাদের হবেই। কিন্তু ইসলামে তওবার পথ সব সময়ই খোলা।

জিকির ও আল্লাহ্‌র নৈকট্য | রুগ্ন হৃদয় সমূহ সতেজ হয় শুধু মাত্র আল্লহর স্মরণে –

আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের চিত্তের প্রশান্তি। দেহকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য যেমন খাবার বা আহারের প্রয়োজন, তেমনি কল্ব বা রুহকে জীবিত রাখার জন্যও খাবারের প্রয়োজন হয়; আর  সেই খাবার হলো আল্লাহর জিকির। তাই আল্লাহর স্মরণ বা জিকির দ্বারা তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা প্রতিটি মানুষের ইমানি দায়িত্ব। ‘সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’  (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫২)  ‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও ভীতিবিহ্বল চিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না।’  (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ২০৫)

একদা একজন সাহাবি আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এমন একটা জিনিস শিক্ষা দিন, যার ওপর আমি রীতিমতো আমল করতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জিকির দ্বারা তোমার জিহ্বা যেন সব সময় তরতাজা থাকে।’ জিকির ছাড়া কল্ব জীবিত রাখা বা অন্তর প্রাণবন্ত রাখার আর কোনো দাওয়াই পৃথিবীতে নেই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে আর অন্তরের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র হলো আল্লাহর জিকির।’ (বায়হাকি)

মাসিক জিকরুল্লাহ- এর শিডিউল

  • প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় শুক্রবার বাদে মাগরিব চট্টগ্রাম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন- +8801814022480
  • প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও শেষ শুক্রবার বাদে মাগরিব ঢাকা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন- +8801814022481

বিশেষ দ্রষ্টব্য, জিকরুল্লাহ সবার জন্য উন্মুক্ত।