সুফিনগর পরিচিতি
কেন সুফিনগর কমপ্লেক্স?
জীবন প্রবাহিত হয় নানান ধারায়, বহুমাত্রিকতায়। এর বিকাশ ও অন্তর্গত মাত্রা উপলব্ধি সহজ নয়। এসবের মধ্যে যে মাত্রাটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আধ্যাত্মিকতা। জীবনের মৌলিকত্ব প্রকাশ পায় আধ্যাত্মিকতার চর্চায়, ধ্যানে, সাধনায়। অন্তর্গত এই মাত্রাকে বুঝতে হলে প্রয়োজন মনের সমৃদ্ধি। পাহাড়ি অরণ্যের ভেতরে ২৪০ কাটা নিজস্ব জমিতে “সুফিনগর কমপ্লেক্স” এর কাজ শুরু করেছে ২০২২ সালের শুরুতে। যা চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলাধীন হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত।
একুশ শতকের শান্তিকামী নাগরিক হিসেবে আমরা মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছি এবং অবিশ্বাস হতাশা আর বস্তুনির্ভর জীবনের দিকে এগিয়ে চলেছি। মূলত এমন যান্ত্রিক সুবিধা দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে বটে, কিন্তু এসব জটিলতা থেকে অব্যাহতি মেলে না। বাহ্যিক আরাম-আয়েশে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারে না, প্রয়োজন জীবনের মৌলিকত্বে প্রবেশাধিকার! সুফি সেন্টার এর সদরদপ্তর সুফিনগর মূলত প্রজ্ঞাময় জীবনকে স্বকীয় মর্যাদায় চিরজাগরূক ও উজ্জ্বল করার জন্য প্রতিষ্ঠিত।
মানব ইতিহাসে সুফি দর্শন এবং জীবনের মৌলিক ধারা আলাদা কিছু নয়, বরং একটি অন্যটিকে সমৃদ্ধ ও পূর্ণ করে। অধ্যাত্ম ভাবাদর্শে আমরা সুফিচর্চা বলতে যা বুঝি তা হলো-আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে পরম করুণাময় আল্লাহর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক আবিষ্কার, নিজেকে জানার নিশ্চয়তা বিধান এবং প্রযুক্তিগত বাস্তবতাকে অতিক্রম করে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরা। কারণ জীবন যতটা না দেহে, তার চেয়ে অনেক বেশি মননে।
শাশ্বত সত্য-সুন্দর-কল্যাণ ও মানবাধিকার আজ হুমকির মুখে পড়েছে সারা দুনিয়ায়। ফলে জীবন ও জগৎ ক্রমাগত অসুস্থ ও অসুন্দর হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় ধর্ম, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও বাজার অর্থনীতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত এক-দেড়শ বছরে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া গোটা বিশ্বে মুসলমান বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী নেই, নেই কোনো বড় আবিষ্কারক । তবু জায়মান অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ মানুষকেই খুঁজতে হবে।
সুফি ভাবাদর্শ উত্তেজনা সৃষ্টি নয়, অনুধাবনে বিশ্বাসী; কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী, ধ্বংসযজ্ঞে নয়, নির্মাণে বিশ্বাসী, কল্পনায় নয়, বাস্তবতায় বিশ্বাসী; ভোগবাদ ও প্রবৃত্তির অনুসরণে নয়, বরং ত্যাগ কুরবানি ও পরোপকারে বিশ্বাসী। সুফিভাবাদর্শের এই প্রতিষ্ঠানে আগত সকল জীবনকে একান্তে একটা মঞ্চ দিতে চায় যেখানে কঠিন, তরল ও নির্মল জীবনানুভূতির কথা মানুষ ভাগাভাগি করে নিতে পারবে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, প্রেমানন্দ, সম্মান আর ভালোবাসায়। আত্মশুদ্ধতার সার্বক্ষণিক প্রয়াসের মাধ্যমে প্রকৃতির মর্মবাণী আহরণ করে, মহাপ্রাণ সুফিরা পৃথিবীতে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দেন। স্রষ্টার ভালোবাসা ও সৃষ্টির সেবাই তাঁদের আদর্শ। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতার ধর্ম। ইসলামের শান্তির বাণী মানুষের কাছে পৌছে দিতেই সুফি সেন্টারের সদরদপ্তর সুফিনগর কমপ্লেক্স।
পরিকল্পনাধীন সুফিনগর কমপ্লেক্স
সুফিনগরে অবস্থান করলে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে আবছা আলোয় সিক্ত হয় হৃদয়। প্রকৃতির দরজায় নাড়া দেয় স্নিগ্ধ শুভাগমন। কোনো কোনো মুহুর্ত হয়ে ওঠে প্রমোদ তরীর মতো আনন্দময়। মোহনীয় আবেশ ছড়ায় বৃক্ষরাজির পাতায় পাতায়। রাতের সুফিনগরে নক্ষত্ররা সারি বেঁধে অভিনন্দন জানায় বাসিন্দাদের।এভাবেই একদিন সুফিনগর বিশ্বলোকে গোলাপের ন্যায় সুরভি ছড়াবে।